বাংলাদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশের ভিসা পেতে সাম্প্রতিক সময়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে সরকার গভীরভাবে সচেতন ও উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। বুধবার (৮ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ভিসা প্রক্রিয়ায় নানা দুর্বলতা এবং আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে নিয়মভঙ্গের কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা খুব বেশি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করি। তুলনামূলকভাবে আমাদের ইরেগুলার মাইগ্রেশনের হার বেশি। রেপুটেশনেরও প্রশ্ন আছে। এজন্য ভিসা জটিল হয়ে গেছে। আমাদের ঘর গোছাতে হবে। তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে।” তিনি আরও জানান, ভিসা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যাত্রা সহজ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা এটি সরকারি পর্যায়ে আলোচনা করেছি।” তিনি স্পষ্ট করে দেন, ভিসা দেওয়া কোনো দেশের বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এটি তাদের সুবিধা। তবে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকেও ভুল হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকেও অনেক ভুল থাকে। আমরা অনেক সময় নকল বা ভুয়া নথি দাখিল করি, যা ভিসা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।” উদাহরণ হিসেবে তিনি জার্মানির কথা তুলে ধরেন, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভিসার জন্য আবেদন করেন, অথচ দেশটির দূতাবাস বছরে মাত্র দুই হাজার ভিসা দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৌহিদ হোসেন জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং অনুরোধ করেছেন যেন ভিসা সংখ্যা কমপক্ষে ৯ হাজারে উন্নীত করা হয়, যা পাকিস্তানকে দেওয়া ভিসার সমান। এছাড়া দিল্লিভিত্তিক কিছু বিদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদনকারীরা সমস্যায় পড়ছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তার মতে, এসব দূতাবাসের ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কঠিন এবং তারা পর্যাপ্ত ভিসা দিচ্ছে না।
সমস্যা সমাধানে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভিসা আবেদনের স্থানে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছি, যেন বাংলাদেশিরা দিল্লির বাইরে অন্য স্থানগুলো থেকেও আবেদন করতে পারেন।” এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সহজতর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।